
প্রকাশিত: Sun, Jan 15, 2023 3:36 PM
আপডেট: Sat, Jun 14, 2025 6:34 PM
‘আমার যে একটা বিয়ে হয়েছিলো, এই পরিচয়টা কি কখনো মুছে ফেলা যাবে?’
সাদাত হোসাইন
‘আমার যে একটা বিয়ে হয়েছিল, এই পরিচয়টা কি কখনো মুছে ফেলা যাবে? যাবে না।’ ‘মুছতে হবে কেন? মানুষের জীবনে অনেক ঘটনাই ঘটে। ইচ্ছেয় ঘটে, অনিচ্ছেয় ঘটে। নিজের দোষে ঘটে, অন্যের দোষেও ঘটে। কিন্তু তাই বলে সেই ঘটনার দাগ সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে?’ ‘কিন্তু হয় তো! আমাদের চারপাশের পৃথিবীটাই তো এমন। নিজে ভুলে যেতে চাইলেও চারপাশ সারাক্ষণ জোর করে মনে করিয়ে দিতে থাকে। বলতে থাকে, তুমি দোষী, তুমি অপরাধী। তুমি আর সবার মতো স্বাভাবিক কেউ নও। তুমি অস্বাভাবিক, ডিফেক্টেড।’
আজাদ হাসল, ‘তোমারও কি মনে হয় তুমি ডিফেক্টেড?’ রেণু এই প্রশ্নের জবাব দিলো না। তার মুখ ভার। চোখ টলমল। আজাদ বলল, ‘আচ্ছা, আর যদি এমন হয় যে তোমার চারপাশের মানুষ সারাক্ষণ তোমাকে এটি মনে করিয়ে দেয় যে তুমি অনন্য? তোমার মতো এমন মায়াময় ভালোবাসার মানুষ এই পৃথিবীতে আর একটাও নেই, তাহলে?’ রেণু জবাব দিল না। আজাদ বলল, ‘জীবনভর ভুল মানুষের কারণে আমাদের জীবনে অসংখ্য ভুল হয়। সেই ভুল থেকে ক্ষত তৈরি হয়। কিন্তু সময় সেই ক্ষত ক্রমশই মুছে দিতে থাকে। আর আমরা যারা বোকা তারাই কেবল সেই ক্ষতগুলো খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে আবার দগদগে ঘায়ে রূপান্তরিত করি। তাকে শুকাতে দেই না।’ ‘কিন্তু সময় যদি কারো ক্ষত শুকিয়ে দিতে না পারে? যদি তা দুঃসহ স্মৃতি হয়েই থেকে যায়?’
‘তাহলে সেটি মোছার ব্যবস্থা করতে হবে।’ ‘কীভাবে মুছব?’ ‘অনেক অনেক ভালো স্মৃতি তৈরি করে। ঘরের দেয়ালে নোনা ধরলে কিংবা পলেস্তরা খসে গেলে আমরা কী করি? তেমনই রেখে দেই? যাতে ধীরে ধীরে পুরো বাড়িটাই নষ্ট হয়ে যায়?’ ‘উহু।’ ‘তাহলে? আমরা তাকে ধুয়ে মুছে নতুন রঙ করি। যাতে সেই নোনা ধরা দেয়াল ঝলমলে হয়। নষ্ট হয়ে না যায়। জীবনও তেমনই। এখানেও এর দেয়ালজুড়ে অসংখ্য ক্ষত তৈরি হয়, নোনা ধরে। সেসব ধুয়ে মুছে নতুন রঙ না করলে তা আরও বাড়ে। বাড়তেই থাকে। তারপর নষ্ট করে ফেলে পুরো জীবনটাই।’
‘ঘরের দেয়াল রঙ করা যায়, জীবনের না। কারণ, জীবনের রঙ কোথাও কিনতে পাওয়া যায় না।’ ‘যায়। কিন্তু আমরা তা কিনতে জানি না।’ ‘কীভাবে?’ ‘জীবনের রঙ হলো ভালো মুহূর্ত, সুন্দর স্মৃতি। দ্যা বিউটিফুল মোমেন্ট অ্যান্ড দ্যা বিউটিফুল মেমোরিজ। তুমি জীবন জুড়ে যত বেশি ভালো স্মৃতি তৈরি করতে পারবে, তত বেশি ওই নোনা ধরা খারাপ মেমোরিজগুলো ঝাপসা হয়ে যেতে থাকবে। ক্ষতগুলো শুকিয়ে যেতে থাকবে।’ ‘কিন্তু ওই ভালো স্মৃতিই তো আর কখনো তৈরি করা যায় না। ওটাই তো সবচেয়ে বেশি কঠিন। দুরুহ। অসাধ্য।’
আজাদ রেণুর হাতটা তার হাতের মুঠোয় শক্ত করে ধরল। তারপর বুকের সঙ্গে চেপে ধরতে ধরতে বলল, ‘আমি তোমাকে এতো এতো ভালো স্মৃতি তোমায় দেব যে তুমি তোমার জীবনের সকল দুঃসহ স্মৃতি ভুলে যাবে। তোমার সকল ক্ষত মুছে যাবে। অন্য কারো অপরাধের জন্য তোমার আর কখনোই নিজেকে দোষী কিংবা ডিফেক্টেড মনে হবে না। ’ রেণু যেন আজাদের বুকে বয়ে চলা হৃদস্পন্দনের শব্দ শুনতে পাচ্ছিল। তার ভাষাও। মানুষ মানুষের তীব্রতম অনুভূতি শব্দহীন স্পর্শেও বুঝে ফেলতে পারে। এই প্রথম যেন কথাটি পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারল সে। -সে এসে বসুক পাশে। সাদাত হোসাইনের বইমেলার উপন্যাস । আসছে অন্যধারা থেকে। ফেসবুক থেকে
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
